ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ১৩/১১/২০২৪ ১০:০৯ এএম

বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে বছরের পর বছর ব্যবসা করছেন ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা। ইন্টারনেট সংযোগের কল্যাণে গ্রাহকের তথ্য আদান-প্রদানের বড় সুবিধার পাশাপাশি মাথার ওপর ঝুলন্ত তারের জঞ্জালের কারণে বেড়েছে দুর্ভোগও। বিশেষ করে এসব তার এমনভাবে টানা হচ্ছে, যা বরিশাল নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে। অপরদিকে, এসব তারের জঞ্জালের কারণে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার থেকে শুরু করে তারে আগুন লেগে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে। এ জন্য ইন্টারনেট, সিসি ক্যামেরা এবং ক্যাবল টিভির (ডিশ লাইন) তার টানতে বিদ্যুতের খুঁটি ছেড়ে পৃথক ব্যবস্থার দাবি উঠেছে, যাতে নিরবচ্ছিন্ন সুবিধার পাশাপাশি দুর্ঘটনামুক্ত থাকতে পারেন নগরবাসী।

বরিশাল নগরীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক ইন্টারনেট কোম্পানির তার। বেশিরভাগ কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে রাজধানী ঢাকা থেকে। নগরীতে এসব কোম্পানির হাজার হাজার গ্রাহক রয়েছে। সর্বোচ্চ ৮শ’ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন পাঁচশ’ টাকা পর্যন্ত মাসিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে গ্রাহককে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম টাকা দিয়েই গ্রাহক সেবা পাচ্ছে। মাসিক টাকা দিতে একদিন দেরি হলে সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমনকি লাইন টানা তার থেকে শুরু করে সংযোগের জন্য ব্যবহৃত বক্সের দামও গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়। এর সঙ্গে রয়েছে লাইন টেনে দেওয়া কর্মচারীদের বকশিশও।

আর প্রতিনিয়ত এ লাইনের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এ কারণে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে শুরু করে টেলিফোন এবং সিটি করপোরেশনের লাইটের খুঁটি বছরের পর বছর ব্যবহার করছে এসব কোম্পানি। এতে বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হলে ওই তারের কারণে খুঁটিতে ওঠানামা করা বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যায় পড়তে হয়। আর ইন্টারনেট পরিষেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা ও তাদের ক্যাডার বাহিনী। এসব কারণে বিদ্যুৎ ও টেলিফোন অফিসের কর্মকর্তারা বছরের পর বছর মুখ খুলতে পারছিলেন না। কথা বললে তাদের নানাভাবে হয়রানিসহ বদলি বা চাকরিচ্যুতির হুমকি-ধমকি পর্যন্ত দেওয়া হতো।

ইন্টারনেট পরিষেবায় কর্মরত মো. ইমরানসহ একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবারের তিনবেলা খাবার এবং সব খরচ। এ কাজ করে ভালো বেতন পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয় না। যারা যত অভিজ্ঞ তাদের বেতন তত ভালো। এ কারণে কাজ শেখার পর বিভিন্ন কোম্পানিতে অল্প বেতনে চাকরি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। পরে ভালো বেতনের অফার পেলে চলে যান। বর্তমানে বরিশালে ৩২টি কোম্পানির অধীনে পাঁচ শতাধিক লোক কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রতিবেদন না করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

ইন্টারনেট লাইন পরিচালনাকারী মো. মঞ্জু ও আসলাম খানসহ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজ অনুযায়ী সরকারকে ভ্যাট দিতে হয়। সে ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন গ্রাহকপ্রতি ২৫ টাকা থেকে একশ’ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট গুনতে হয়। এছাড়া অফিস এবং ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে কর্মচারী রাখতে হয়। প্রতিযোগিতার বাজারে কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হয়। তা না হলে গ্রাহক হারানোর সম্ভাবনা থাকে।

তারাও দাবি করেন এখন প্রযুক্তির যুগ। একটা সময় প্রতিটি ঘরে ইন্টারনেটের লাইন থাকবে। এ ব্যবসাটা চলবে আজীবন। সরকারও বিপুল অঙ্কের ভ্যাট পাবে। সরকার থেকে বিদ্যুতের খুঁটির পরিবর্তে আলাদা কোনও ব্যবস্থা করলে ব্যবসায়ীদেরও সুবিধা হবে। বিদ্যুতের খাম্বায় উঠে ইন্টারনেট লাইনের কাজ করতে গিয়ে অনেক কর্মী আহত হয়েছে। আমরাও চাচ্ছি সরকার থেকে যেন পৃথক ব্যবস্থা করা হয়। তখন প্রতিটি কোম্পানি নির্দিষ্ট রঙের তার ব্যবহারের করবে। পাশাপাশি থাকবে নির্দিষ্ট লেন। এতে তারজট হবে না। সমস্যা হলে সহজেই তার চিহ্নিত করে কাজ করতে পারবেন। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করলে লাভবান হবে সরকার। একইসঙ্গে ব্যবসার প্রসারও বাড়বে।

বরিশালের সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া চলা সম্ভব নয়। প্রতিটি মানুষ এখন ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল। আর এ ব্যবসায় বহু লোক জড়িয়ে আছে। সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে। এই সেক্টর ভালোভাবে পরিচালনার জন্য শুধু বরিশাল নয়, প্রতিটি শহরে একটা ব্যবস্থা করা উচিত। পৃথক খুঁটি অথবা মাটির নিচ দিয়ে তার টানার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ নিলে তারের জঞ্জাল থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপক অহিদ মুরাদ বলেন, তার জানা মতে প্রতিটি কোম্পানি থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তার টানা বাবদ বিদ্যুৎ অফিস কিংবা সিটি করপোরেশনকে কিছুই দেয় না ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো। অথচ তাদের কারণে খুঁটিসহ বৈদ্যুতিক তারে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো যাতে তাদের খুঁটি ব্যবহার না করে, এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পরিতোষ চন্দ্র সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুধু ইন্টারনেটের তার নয়, ব্যক্তি থেকে শুরু কর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা এবং ডিশ লাইনের ক্যাবল বৈদ্যুতিক খুঁটিতে টানার কারণে বিদ্যুৎসেবা প্রদানে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এদের কারণে বৈদ্যুতিক তারে আগুনের ফুলকি দেখা যায়। বিদ্যুতের খুঁটি বাদ দিয়ে অন্যভাবে তার টানার ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

১ নভেম্বর ভোরে একটি কাভার্ডভ্যান নগরীর গির্জা মহল্লা মোড়ের লাইটপোস্টে ধাক্কা দেয়। এতে লাইটপোস্টটি ভেঙে শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের ফুলকি দেখা দেয়। একপর্যায়ে ইন্টারনেট তারের জঞ্জালের ওপর পড়ে আগুন লেগে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎসেবা। অনেক সময় নিয়ে পরে এ সমস্যা সমাধান করা হয়। এখন বেশি সমস্যায় পড়তে হয় ইন্টারনেট তারের কারণে। বিদ্যুতের খুঁটিতে ইন্টারনেট ক্যাবল না থাকলে সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যায় বলে জানান ওজোপাডিকোর প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম।

পাঠকের মতামত

নাইক্ষংছড়িতে নাশকতার অভিযোগে মামলা,আটক -৩, এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ৬৫ জন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে নাশকতার অভিযোগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬৮ জনের বিরুদ্ধে নাশকতা ...

৮১ রোহিঙ্গা আটক

পার্বত্য জেলার বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার পোয়ামুহুরী সীমান্ত দি‌য়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ৮১ জন ...